বাংলা ব্যাকরণের গুরুত্বপূর্ণ কিছু অনুচ্ছেদ রচনা পিডিএফ ডাউনলোড

0
485

বাংলা ব্যাকরণের গুরুত্বপূর্ণ কিছু অনুচ্ছেদ রচনা

পিডিএফ ডাউনলোড

পথশিশু

সাধারণত যেসব শিশু পথেঘাটে অবস্থান করে তাদের পথশিশু বলে। এসব শিশুর অনেকেই মা-বাবা হারা। কারো মা থাকলেও বাবা নাই। আবার মা মরা শিশুরাও বাবার অবহেলায় পথশিশুতে পরিণিত হয়। এই পথশিশুরা ‘টোকাই’ নামে পরিচিত। এরা অবহেলিত ,অধিকারবঞ্চিত। সমাজের বিত্তবানরা এদের প্রতি উদাসীন। আবার সরকারও এদের দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত করার ক্ষেত্রে তেমন উদ্যোগী না হওয়ায় এসব শিশু লেখাপড়া থেকে বঞ্চিত হয়। কেউ কেউ অপুষ্টিতে ভুগে বিকলাঙ্গ হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করে। এদের কেউ কেউ রাস্তায় কাগজ কুড়িয়ে ,ভিক্ষা করে জীবিকা নির্বাহ করে। ফুটপাত ,দোকানের পাশে বা স্টেশনের প্ল্যাটফরমে এরা রাত কাটায়। ডাস্টবিনের অখাদ্য -কুখাদ্য খেয়ে এরা বেড়ে ওঠে। পথশিশুরা আমাদের দেশেরই সন্তান। এরা উপযুক্ত পরিচর্যা ও শিক্ষা পেলে দেশের দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত হতে পারে। এদের প্রতি বিত্তবান ও সরকারের সুদৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন। না হলে এসব সুবিধাবঞ্চিত শিশু বড় হয়ে সন্ত্রাস ,চুরি -ডাকাতি ও অসামাজিক কাজে লিপ্ত হওয়ায় আশঙ্কা রয়েছে।

গ্রিন হাউজ প্রতিক্রিয়া ও বাংলাদেশ

প্রাচীনকাল থেকেই বিশ্বের মানুষ তার চারপাশের পরিবেশের সাথে সামঞ্জস্য বিধান করে জীবনযাপন করে আসছে। পরিবেশ কথাটির অর্থ হলো আমরা যে যেখানে থাকি তার চারপাশের জগৎ, অর্থাৎ গাছপালা, মাটি, পানি, পাহাড়-পর্বত, নদী-সাগর, প্রাণী, উদ্ভিদ ইত্যাদি মিলেই পরিবেশ। মানুষ আর পরিবেশের মধ্যে যতদিন সমন্বয় বিদ্যমান ছিল ততদিন মানুষের কোনো দুর্ভাবনা ছিল না। কিন্তু সভ্যতার বিকাশ আর মানুষ বৃদ্ধির সাথে সাথে পরিবেশও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠেছে।

ভবিষ্যতে এই সমস্যা আরও প্রকট হবে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে নগরায়ণ, অপরিকল্পিতভাবে মিল-কারখানা স্থাপন, যানবাহন থেকে নির্গত কালো ধোয়া, অধিকমাত্রায় বৃক্ষনিধন, কীটনাশকের ব্যবহার, রাসায়নিক তেজস্ক্রিয়তা, বনভূমি ধ্বংস ইতাদি কারণে প্রতিদিন পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। বাস্পশক্তি ও বিদ্যুৎশক্তি উৎপাদনের মূলে রয়েছে দহন। এই দহনের ফলে বায়ুতে অক্সিজেনের পরিমাণ হ্রাস পাচ্ছে। এর প্রতিক্রিয়ায় বায়ুমণ্ডলের ওজোনস্তর ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে সূর্যের ক্ষতিকারক তেজস্ক্রিয় রশ্মি পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ছে। ফলে পৃথিবীর তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ভূপৃষ্ঠের উত্তাপ বৃদ্ধি পেতে পারে বায়ুমণ্ডলে এমন গ্যাসের পরিমাণ বাড়ছে। এসব গ্যাস সূর্য থেকে আসা স্বল্প দৈর্ঘ্য বিকিরণের জন্যে স্বচ্ছ কিন্তু লম্বা দৈর্ঘ্য বিকিরণ ধরে রেখে ভূপৃষ্ঠ এবং বায়ুমণ্ডল উত্তপ্ত করে তোলে। বায়ুমণ্ডলে পরিবেশ দূষণের ফলে যেসব গ্যাস জমছে তার অবর্তমানে লম্বা দৈর্ঘ্যের বিকিরণ মহাশূন্যে হারিয়ে যেতো। এসব গ্যাস হলো কার্বন ডাইঅক্সাইড, মিথেন, নাইট্রাস অক্সাইড, ক্লোরোফ্লোরো কার্বন ইত্যাদি। এসব গ্যাস যদি বর্তমান হারে বাড়তে থাকে তবে ২০১৫ থেকে ২০৫০ সালের মধ্যে তা দ্বিগুণ হয়ে যাবে। তাতে ভূপৃষ্ঠের উত্তাপ ১.৫ ডিগ্রি থেকে ৪.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিজ্ঞানীদের মতে, আগামী ৫০ বছরের মধ্যে বৃদ্ধির এই পরিমাণ মানব ইতিহাসের এক অভাবনীয় ঘটনা বলে বিবেচিত হবে। কেননা এক ডিগ্রি তাপের কয়েক দশমাংশ উত্তাপ বৃদ্ধি বিশ্বের আবহাওয়ায় এক বিরাট পরিবর্তন আনতে সক্ষম। এই গ্রিন হাউজ প্রতিক্রিয়ার ফলে সাগরের তলদেশের উচ্চতা বেড়ে যাবে, ঝড়ের তীব্রতা বৃদ্ধি পাবে, উপকূলমণ্ডল ও নদীর পানির উচ্চতা বেড়ে যাবে এবং বাড়বে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ। এতে বিশ্বের বহুভূমি বন্যাকবলিত হবে আর ছড়িয়ে পড়বে লবণাক্ততা। পরিণামে শিল্পকারখানা, জনবসতি, কৃষি উৎপাদন, মৎস্য চাষ এবং বনাঞ্চলের ওপর ভয়াবহ ক্ষতিকর প্রভাব দেখা দেবে। গ্রীন হাউজ প্রতিক্রিয়া সবচেয়ে বেশি আশঙ্কার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে বাংলাদেশের জন্যে। একুশ শতকের মাঝামাঝি আবহাওয়ার পরিবর্তন এবং ভূপৃষ্ঠের উত্তাপ বেড়ে গেলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির প্রতিক্রিয়া বাংলাদেশের মতো ব-দ্বীপ অঞ্চলে সবচেয়ে ভয়ংকরভাবে অনুভূত হবে। উষ্ণমণ্ডলীয় অঞ্চলে অবস্থিত বলে বাংলাদেশে নানা ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখা দেবে। তাই এখন থেকেই পরিবেশ দূষণ রোধ করে ভবিষ্যতের জন্যে প্রস্তুতি নিতে হবে।

গ্রাম্যমেলা

মেলা হচ্ছে গ্রামীণ ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির পরিচায়ক। মেলা লোক সংস্কৃতিরই এক বিশেষ ধমনী। এই ধমনীতেই জীবনের স্পন্দন। এরই মধ্যে বাঙালী খুঁজে পেয়েছে নিজেকে। মেলার আক্ষরিক অর্থ “মিলন”। মেলার নামে সবার মন এক অভূতপূর্ব আনন্দের উচ্ছাসে ওঠে নেচে। মেলার আনন্দের স্মৃতি সকলের মনেই থাকে গভীরভাবে মুদ্রিত। মেলা পরস্পরের সঙ্গে দেখাসাক্ষাৎ ও ভাব-সম্মিলনের সংযোগ সেতু। প্রাচীনকাল থেকেই গ্রাম্য মেলার গুরুত্ব তাই অসীম। বিশেষ কোন পর্ব উপলক্ষে মেলার প্রচলন হলেও এখন গ্রামীণ-জীবনে এটি একটি স্বাভাবিক উৎসবে রূপ নিয়েছে। সাধারণত বছরের শেষে অথবা বছরের শুরুতে এই মেলা বসে অথবা বিশেষ কোন পর্ব উপলক্ষেও মেলার আায়োজন করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশের প্রতিটি জেলাতেই নানা ধরনের মেলার প্রচলন রয়েছে। স্থান বিশেষে রয়েছে কিছু বিখ্যাত মেলা। যা ঐ স্থানের নামেই সুপরিচিত

সাধারণত মেলা বসার জন্য হাট-বাজারের ন্যায় নির্দিষ্ট কোন স্থান নির্ধারিত থাকে না। গ্রামের কেন্দ্রস্থলে খোলা মাঠে, মন্দির প্রাঙ্গনে, নদীর তীরে অথবা বড় বৃক্ষের নিচে গ্রাম্য মেলা বসতে দেখা যায়। পূর্ব ঐতিহ্য অনুযায়ী এসব স্থানে মেলার আয়ােজন করা হয়। মেলার প্যানে সাময়িকভাবে দোকানপাট বসার মত চালা নির্মাণ করা হয়। মেলা শেষ হওয়ার পর এগুলো ভেঙে ফেলা হয়। বছরের শেষে মেলার আনন্দে আবারও মুখরিত হয়ে ওঠে মেলার সে স্থানে। বাংলাদেশে প্রচলিত মেলাগুলোর কোনটি একদিন, কোনটি এক সপ্তাহ, কোনটি পনের দিন আবার কোন কোন মেলা এক মাসব্যাপী চলতে থাকে। আজকাল শুধু গ্রাম নয়, শহর বা আধা শহরেও মেলার আসর বসে। তবে গ্রামই মেলার উপযুক্ত পটভূমি। আমাদের দেশে গ্রামে সাধারণত ধর্মীয় উৎসবকে কেন্দ্র করে মেলা অনুষ্ঠিত হয়। পহেলা বৈশাখ, রথযাত্রা, জন্মাষ্টমী, বিজয়া দশমী, দশই মহরম, চৈত্র সংক্রান্তি এসব উৎসবকে কেন্দ্র করে অধিকাংশ মেলা বসে থাকে। তবে উপলক্ষ যাই হোক না কেন মেলা বাঙালি সমাজ ও মানুষের নিকট খুব জনপ্রিয় ও আনন্দের দিন। মেলায় সমাজের সর্ব শ্রেণীর মানুষ, ধনী-নির্ধন, উচ্চ-নীচ নির্বিশেষে সকলেই এসে মিলিত হয়। বিভেদের পার্থক্য ভুলে গিয়ে সকলেই এক আনন্দের জোয়ারে গা ভাসায়। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে গ্রাম্য মেলা শুধু আনন্দ চিত্তের শান্তিই দেয় না, বিত্তের শক্তি যোগায়। মেলায় কৃষি ও কুটির শিল্পজাত দ্রব্যাদি বেচাকেনা হয়। মেলাকে কেন্দ্র করে গ্রামের কামার-কুমার, তাঁতী, সুতারদের মধ্যে বিভিন্ন জিনিস বানানাের হিড়িক পড়ে যায়। তাই দেখা যাচ্ছে, মেলার মাধ্যমে গ্রামীণ অনেক মানুষের কিছু উপার্জনের পথও প্রশস্ত হয়।

মেলাকে আশ্রয় করেই গ্রামীণ মানুষের আনন্দ-উৎসের রুদ্ধ দুয়ার খোলে যায়। এর মধ্যেই সে খুঁজে পায় বেঁচে থাকার সার্থকতা। খুঁজে পায় মুক্তির আনন্দ। সত্যপীর, শীতলা, মনসা, ষষ্ঠী, ওলাবিবি, সতী-মা এমনি কত লৌকিক দেবদেবী গ্রামীণ জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কত শত শতাব্দীর মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা আর ধর্মীয় আকুতির সঙ্গে এঁদের আত্মিক সম্পর্ক। এদের কেন্দ্র করে কত লোকগাথা, কত ব্রতকথা, পাঁচালী, ছড়া, গ্রাম্য সাহিত্য-সঙ্গীতের ধারা আজও চলে আসছে। মেলা গ্রামীণ জীবনের শুকনো খাতে নিয়ে আসে প্রবল আনন্দ-জোয়ার। সেই জোয়ারেই বাঙালীর চিত্তভূমি সিক্ত হয়েছে।

শব্দদূষণ

শব্দ বা আওয়াজ হলো ধ্বনি-তরঙ্গ। এটি মানুষের বাগ্যন্ত্র বা অন্য কোনো উৎস থেকে উৎপাদিত বা সৃষ্টি হয়ে আমাদের কর্ণকুহরে এসে পৌছায়। এসব শব্দ কখনো কখনো আমাদের জন্য ক্ষতিকর ও বিরক্তিকর হয়ে ওঠে, আর সেটিই হলো শব্দদূষণ।

পাখপাখালির ডাক, মৃদু শব্দ, সংগীতের সুর শ্রুতিমধুর, যানবাহনের হর্নের আওয়াজ, রেডিও-টেলিভিশনের উচ্চ শব্দ, কলকারখানার সাইরেন, মাইকের আওয়াজ, উডড়োজাহাজের শব্দ ইত্যাদি আমাদের প্রাকৃতিক পরিবেশ ও সামাজিক পরিবেশকে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। কারণ এ শব্দগুলো অতিমাত্রার ফলে শব্দদূষণ ঘটছে। শব্দদূষণে আমাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়। শব্দদূষণের ফলে শিশু ও বড়দের পড়াশোনার ক্ষতি হচ্ছে, মানুষের কাজকর্ম ব্যাহত হচ্ছে মানুষ। মানসিক অবসাদগ্রস্ত হচ্ছে। শব্দদূষণের ফলে বিভিন্ন রোগেরও সৃষ্টি হচ্ছে। উচ্চ শব্দযুক্ত শিল্পকারখানায় যেসব শ্রমিক কাজ করে তাদের প্রবণশক্তি ১০ বছরে অর্ধেক হ্রাস পায়। শব্দদূষণের ফলে নানা ধরনের মানসিক বিকার ও অসুখের সৃষ্টি হয়। উন্নত দেশে আইন প্রণয়ন ও পালনের মাধ্যমে শব্দদূষণের মাত্রা ক্রমান্বয়ে হ্রাস পেলেও তৃতীয় বিশ্বে এর প্রবণতা দিনদিন বৃদ্ধিই পাচ্ছে। আমরা সচেতন হলে শব্দদূষণ থেকে মুক্তি পেতে পারি। আজকের দিনে শব্দদূষণ প্রতিকারে উদ্যোগ ও সচেতনতা অতীব প্রয়োজনীয়। সেই সাথে প্রয়োজন আমাদের সচেতনতা।

শিক্ষা সফর

বৈচিত্র্যের সন্ধানী মানুষ কখনো স্থির হয়ে বসে থাকতে পারে না। নতুন আকর্ষণে মানুষ প্রতিনিয়ত এক স্থান থেকে অন্য স্থানে গমন করে। দেশ সফর মানুষের জ্ঞান সঞ্চয়ের ও অবকাশ যাপনের একটি উৎকৃষ্ট পন্থা। এতে অভিজ্ঞতা বাড়ে এবং হৃদয়ের প্রসার ঘটে। এই উদ্দেশ্যগুলোকে সামনে রেখে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য শিক্ষাসফরের আয়োজন করা হয়। ছাত্র-ছাত্রীরা বই-পুস্তক পাঠ করে দেশ-বিদেশের ইতিহাস প্রসিদ্ধ স্থান ও বস্তুসমূহের সম্বন্ধে অনেক কিছু জানতে পারে। কিন্তু নিজের চোখে দেখলে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা লাভ হয় অনেক বেশি।

বই পড়ে কোনো একটি স্থান ও বিষয় সম্বন্ধে জ্ঞানার্জন সম্পূর্ণ হয় না বলেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ প্রতিবছর ছাত্রদের শিক্ষাসফরের ব্যবস্থা করেন। এর অন্যতম উদ্দেশ্য একাডেমিক প্রয়োজন মেটানো। কিন্তু শিক্ষা সফর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এইজন্য যে, এটি ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে সহমর্মিতা ও ভাবের আদান-প্রদান ঘটায়। ছাত্ররা জাতির মেরুদণ্ড, ছাত্রদের সুশিক্ষা দানের মধ্যে রয়েছে দেশ গড়ার কার্যকারিতা। আর হাতে-কলমে শিক্ষা গ্রহণই সুশিক্ষার অন্যতম পন্থা যা শিক্ষা। সফরের মাধ্যমে সম্ভব। শিক্ষা শুধু বইয়ের কয়েকটা পাতার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। শিক্ষার আলো সর্বত্রই বিচরণ করে। আর শিক্ষা সফর সেই আলোকে ছড়িয়ে দেয় উন্মুক্ত আকাশে। শিক্ষা সফরের মূল আনন্দ হলো প্রকৃতির আবার সৌন্দর্য্যকে প্রাণ খুলে অবলোকন করা। কিছুটা সময় প্রকৃতির মাঝে নিজেকে হারিয়ে ফেলা এবং প্রকৃতির মাঝেই নিজেকে আবিষ্কার করা এ এক অদ্ভুত অনুভূতি। ভ্রমণের আনন্দ একে অন্যের সাথে ভাগাভাগি করার মাধ্যমে সেই অনুভূতি হয়ে উঠে আনন্দের মহাসমুদ্র।

শুধু যে আনন্দই শিক্ষা সফরের উদ্দেশ্য তা কিন্তু নয়। শিক্ষা সফরের মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী অনেক অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারে। শিক্ষা সফরের মাধ্যমে শিক্ষার্থী অনেক স্থান এবং ওই স্থানের জীবন যাপনের ধরণ এবং বিভিন্ন ধরণের সংস্কৃতির সম্পর্কে জানতে পারে। তাদের কল্পনা শক্তি বৃদ্ধি পায়। শরীর এবং মননের বিকাশ ঘটে। পড়াশুনার একঘেমেয়ি দূর হয়। মন প্রফুল্ল থাকে যা পরবর্তীতে শিক্ষার্থীকে পূনরায় পড়াশুনায় উজ্জীবিত করে। সুতরাং শিক্ষা সফরের গুরুত্ব অত্যধিক ও অপরিসীম।

মাদকাসক্তি

বিশ্বমাঝারে নানান আসক্তির মধ্যে মাদকাসক্তি অন্যতম। যেসব খাদ্য, পানীয় বস্তু সুস্থ মস্তিষ্কে বিকৃতি ঘটায়, জ্ঞান-বুদ্ধি লোপ করে এবং নেশা সৃষ্টি করে সেগুলোকে আমরা মাদকদ্রব্য বলে থাকি। মাদক জাতীয় উপাদান ও ওষুধের ব্যবহারের প্রবণতাই মাদকাসক্তি।

মাদকাসক্তি বর্তমান বিশ্বের মারাত্মক সমস্যা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, মাদকাসক্তি হচ্ছে চিকিৎসা বিজ্ঞানে গ্রহণযোগ্য নয় এমন দ্রব্য অতিরিক্ত পরিমাণ গ্রহণ করা ও তার উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়া। বিভিন্ন কারণে মানুষ মাদকাসক্ত হয়। এর মধ্যে সঙ্গদোষ, কৌতূহল, পারিবারিক কলহ, ধর্মীয় মূল্যবোধের বিচ্যুতি ও মাদকদ্রব্যের সহজলভ্যতা উল্লেখযোগ্য। বিশেষ করে যুবসমাজই মাদকাসক্তিতে সবচেয়ে বেশি আচ্ছন্ন। বিশ্বে বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য চালু আছে। মদ, ভাং, গাঁজা, আফিম ইত্যাদি নেশা বহু প্রাচীনকালের। বর্তমানে মাদকদ্রব্য হিসাবে হেরোইন, মারিজুয়ানা, এলএসডি, প্যাথেড্রিন, কোকেন, হাসিস, মরফিন ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। মাদকাসক্তির কারণে মানসিক ও শারীরিক শক্তি লোপ পেলে ব্যক্তির সামাজিক আচরণে কিছু বিকার দেখা যায়। মানুষের কর্মশক্তি লোপ পায়, আয়ু কমে যায়। মাদকাসক্তির প্রভাবে যুবক শ্রেণির নৈতিক অধঃপতন ঘটছে। নেশাগ্রস্তদের মধ্যে অপরাধপ্রবণতা বাড়ছে। তারা স্বাভাবিক সুখ স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবনকে বিসর্জন দিচ্ছে। গবেষণায় দেখা গেছে মাদকদ্রব্য গ্রহণ ও অসামাজিক কাজে লিপ্ত হওয়ার মধ্যে একটি সম্পর্ক রয়েছে। মাদকাসক্তির ব্যক্তিগত দিক ছাড়াও এর আরও একটি ব্যবসায়িক দিক রয়েছে, যা বিশাল অপরাধ জগতের সাথে সম্পর্কিত। মধ্যপ্রাচ্য, রাশিয়া, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা প্রভৃতি দেশ মাদকদ্রব্যের চোরাচালানের ট্রানজিট পয়েন্ট হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। আমাদের দেশের ১৭ ভাগ মানুষ মাদকদ্রব্য ব্যবহার করে। এর বিরুদ্ধে সচেতনতার পাশাপাশি এখনই প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক উদ্যোগে আগামী প্রজন্মকে উপহার দিতে হবে একটি মাদকমুক্ত সমাজ।

দেশপ্রেম

নিজের দেশকে, দেশের মানুষকে ভালোবাসাই হচ্ছে দেশপ্রেম। নিজের দেশকে ভালোবাসে না এমন কে আছে? দেশপ্রেম মানুষের স্বভাবজাত গুণ। সামাজিক মানুষের দেশের প্রতি গভীর মমত্ববোধই হলো দেশপ্রেম। মা, মাটি ও মানুষকে ভালোবাসার মধ্যেই দেশপ্রেমের মূল সত্য নিহিত। প্রত্যেক মানুষের দেহ মন বিশ্বাস আদর্শ সবকিছুই স্বদেশের বিভিন্ন উপাদান দ্বারা পুষ্ট।তাই সে দেশের ভাষা-সাহিত্য, ইতিহাস-ঐতিহ্য, সমাজ-সংস্কৃতি এবং জীবন ও পরিবেশকে ভালােবাসতে শুরু করে। এই ভালোবাসাই হচ্ছে দেশপ্রেম।

শুধু মুখে মুখে এই ভালোবাসার কথা বললেই দেশপ্রেম হয় না। চিন্তায়, কথায় ও কাজে দেশের জন্য যে ভালোবাসা প্রকাশ পায় সেটাই প্রকৃত দেশপ্রেম। ফলে স্বদেশের জন্যে তার যে প্রেম তা কৃতজ্ঞতার, কর্তব্যের এবং দায়িত্বের। প্রকৃত দেশপ্রেমিকের মধ্যে কোনো সংকীর্ণ চিন্তা থাকে না। দেশের কল্যাণ ও সমৃদ্ধিই দেশপ্রেমিকের সর্বক্ষণের চিন্তা ও কর্মের বিষয়। দেশের স্বার্থকে তিনি সবকিছুর উর্ধে স্থান দিয়ে থাকেন। নিজের অহংকার, মেধা, প্রজ্ঞা ও গৌরব স্বদেশের জন্য নিবেদন করেন। দেশের জন্য নিজেকে অকাতরে বিলিয়ে দিয়ে দেশের মর্যাদা রক্ষা করেন। যুগে যুগে অসংখ্য মনীষী দেশের মানুষের কল্যাণে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন। ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতার লড়াইয়ে জীবন দিয়েছেন তীতুমীর (Titumir), প্রীতিলতা (Pritilata Waddedar)। ফাঁসির মঞ্চে জীবন উৎসর্গ করেছেন ক্ষুদিরাম (Khudiram Bose, সূর্য সেন (Surya Sen)। মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্য শহীদ, রফিক, বরকত, সালাম, জব্বার এবং বাংলাদেশের। স্বাধীনতা-সংগ্রামে আত্ম-বিসর্জিত অসংখ্য বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, ছাত্র-শিক্ষক, লক্ষ লক্ষ মা-বোন, মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী অকুতোভয় সৈনিকদের নাম শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করতে পারি। দেশপ্রেমের এমন দৃষ্টান্ত পৃথিবীর ইতিহাসে সত্যিই বিরল।

মানুষ জীবনে যে কোনো সময়ে যে কোনো স্থান থেকে দেশকে ভালোবাসতে পারে। নিজ দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালনের মধ্যে দেশপ্রেম নিহিত। যদিও আমরা জন্মের পরেই দেশকে ভালোবাসতে শুরু করি, তদুপরি ছাত্রজীবন দেশপ্রেমের প্রকৃষ্ট সময়। দেশপ্রেম হৃদয়ে থাকলে দেশের মাটি, মানুষ, প্রকৃতি সবকিছুই অতি আপন বলে মনে হয়। দেশকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য ছাত্ররাও নানাভাবে দেশের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করে দেশপ্রেমের পরিচয় দিতে পারে। স্বদেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হতে হলে মানুষকে ভালোবাসতে হবে। নিজের দৈন্যদশাকে তুচ্ছ করতে হবে এবং দেশ ও জাতির বৃহত্তর কল্যাণে নিজেকে উৎসর্গ করতে হবে। একটি মহৎ গুণ হিসেবে প্রত্যেক মানুষের মধ্যেই দেশপ্রেম থাকা উচিত। দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশ ও জাতির জন্য কিছু না কিছু অবদান রাখা প্রতিটি দেশপ্রেমিক নাগরিকের একান্ত দায়িত্ব ও কর্তব্য।

বিশ্বায়ন

বিশ্ব এখন হাতের মুঠোয়। এটি সম্ভব হয়েছে বিশ্বায়নের কারণে। রাজনীতি, অর্থনীতি, ধর্ম, জ্ঞানবিজ্ঞান প্রভৃতি ক্ষেত্রে বৈশ্বিক প্রভাবকে বলা হয় বিশ্বায়ন। বিশ্বায়ন একটি বিশ্বব্যাপী ক্রিয়া। যুগে যুগে বিভিন্ন রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক দর্শন মানবসমাজ এবং রাষ্ট্র সংশ্লিষ্ট জীবনধারাকে প্রভাবিত করেছে। অষ্টাদশ শতাব্দীতে শিল্পবিপ্লবের ফলে যান্ত্রিক পদ্ধতিতে পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে ইউরোপে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হয়। উনবিংশ শতাব্দীতে এসে উৎপাদিত সেবা ও পণ্য এবং পুঁজির শুল্কবিহীন অবাধ বিচরণের স্বাধীনতা ধীরে ধীরে সারা বিশ্বে অতিবাহিত হতে যাচ্ছে। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙনের পর ১৯৯১ সালে স্নায়ুযুদ্ধের অবসান ঘটে। এরপর বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ায় ১৯৯২ সাল থেকে বাংলাদেশ মুক্তবাজার অর্থনীতির জগতে প্রবেশ করে। বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশে ব্যাপক বিদেশি বিনিয়োগের যুগ বলা হলেও বাস্তবে তা খুবই কম পূরণ হয়েছে। বাজার উন্মুক্ত হয়ে যাওয়ায় ব্যাপক হারে বিদেশি পণ্যে দেশের ব্যাপক বাজার ভরে যাচ্ছে। ফলে মার খায় দেশীয় পণ্য ও দেশীয় শিল্প। আমাদের রপ্তানি আয়ের সবচেয়ে বড় উৎস তৈরি পােশাক খাতও আজ হুমকির সম্মুখীন। ২০০৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর Multi Fiber Agreement বা MFA এর মেয়াদ শেষ হয়েছে। বাংলাদেশের জন্য রাষ্ট্রে এখন কোঠা সুবিধা রহিত হয়েছে। বিশ্বায়নের ফলে, আমাদের কৃষিখাতও হুমকির মুখে। দেশীয় বীজের পরিবর্তে স্থান কাল করেছে বহুজাতিক কর্পোরেশন কর্তৃক সরবরাহকৃত বীজ। অপরদিকে, বিশ্বায়নের ফলে দেশীয় সংস্কৃতিতেও চলছে ব্যবস্থা। দেশীয় ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও কৃষ্টির পরিবর্তে স্থান দখল করে নিচ্ছে আকাশ সংস্কৃতি। বিশ্বায়নের প্রভাব থেকে দেশকে নিতে হলে শ্রম ব্যবস্থাপনার সহযােগিতামূলক সম্পর্ক সৃষ্টি এবং সুনির্দিষ্ট কল্যাণমুখী উদ্দেশ্যে শিল্প পরিচালনা করে আমাদের দেশীয় শিল্পে দক্ষতা সৃষ্টি করতে হবে। আর তা করতে পারলে বিশ্বায়ন প্রক্রিয়াটা হবে সাফল্যমণ্ডিত।

মোবাইল ফোন

মোবাইল ফোন আধুনিক বিজ্ঞানের একটি অতি সাম্প্রতিক আবিষ্কার। মোবাইল ফোন বলতে আমরা সেই ফোনকে বুঝি যা যে কোন জায়গায় বহন করা যায় এবং অন্যের সাথে যোগাযোগ করা যায়। এটি আমাদের জীবন এবং যোগাযোগ ব্যবস্থায় নতুন মাত্রা সংযোজন করেছে । এটি একটি টেলিফোন ব্যবস্থা যা কোন তার ছাড়াই কাজ করে। মোবাইল ফোনকে সহজে এবং দ্রূত এক স্থান থেকে অন্য স্থানে বহন করা যায়। আমরা যে কোন সময় সংবাদ প্রেরণ করতে পারি। আমরা যে কোন স্থান থেকে অন্যের সাথে যোগাযোগ  করে কথা বলতে পারি। বর্তমানে মোবাইল ফোন বহুবিধ কাজ করে । বর্তমানে মোবাইল ফোন গুলিকে স্মার্টফোনও বলা হয় । মোবাইল ফোনের মাধ্যমে দূরবর্তী স্থানে তাৎক্ষণিকভাবে সংবাদ প্রেরণ করা যায়, খেলাধুলা করা যায়, সময় জানা যায়, গণনার কাজ করা যায়, এবং বিভিন্ন ধরনের সংবাদ জানা যায়। আজকাল মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট সংযোগ দেয়ার ফলে এর কার্যক্ষেত্র বুহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু মোবাইল ফোনের কিছু খারাপ দিকও আছে। বৈজ্ঞানিকগণ সম্প্রতি আবিষ্কার করেছেন যে, মোবাইল ফোন ক্যান্সার ঘটাতে পারে। মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী যদি মোবাইল ফোনে ২ মিনিটের বেশি কথা বলে তবে তার Blood brain barrier ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। অধিকন্তু যুবক ছেলেমেয়েদের নিকট মোবাইল ফোন রাখা একটি ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। আজকাল মোবাইল ফোনে তরুণীদের গোপণ অশ্লীল ছবি ও ভিডিও ক্লিপ ধারণ করে তা অসৎ উদেশ্যে ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়। বস্তুত, মোবাইল ফোন বর্তমান বিশ্বে যোগাযোগ ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনয়ন করেছে ।

একটি বর্ষণমুখর দিন

একটি বর্ষণমুখর দিন বলতে আমরা বর্ষাকালের একটি অবিরাম বর্ষণমুখর দিনকে বুঝে থাকি। বাংলা সন অনুযায়ী আষাঢ় ও শ্রাবণ এই দুই মাস বর্ষাকাল। এই দুই মাসের মধ্যে বিশেষ করে শ্রাবণ মাসে প্রচুর বৃষ্টি হয়। কখনও কখনও সারাদিন থেমে থেমে বৃষ্টি হয়। আবার কখনো মুষলধারে বৃষ্টি হয়। শিশু-কিশোর ও বৃদ্ধলোকজন ঘরে আশ্রয় নেয় ।গ্রামাঞ্চলের মানুষরা ঘরের টিনের চালে বৃষ্টির শব্দ শুনতে পায়। বর্ষণমুখর দিনে ধরণীতে কলো মেঘের জন্য চারদিক অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে যায় । বর্ষণমুখর দিনে হঠ্যৎ প্রকৃতিতে পরিবর্তন আসে,চারদিকে নেমে আসে অন্ধকার। প্রকৃতির এ হঠাৎ পরিবর্তন মানুষ ও জীব-জন্তুর উপরও প্রভাব পড়ে । পাখিরা নিজেদের বৃষ্টি থেকে রক্ষা করতে আশ্রয় নেয় গাছের ওপর । চারদিকে বৃষ্টি হচ্ছে, কখনও মুষলধারে ; কখনও থেমে থেমে। গাছের পাতায় পাতায় টুপটাপ ফোটা পড়ছে। থেমে থেমে ঝি ঝি পােকা ডাকছে। একটি বর্ষণমুখর দিনে পথিকের কষ্টের সীমা থাকে না। গ্রামের মেঠোপথ বৃষ্টিতে ভিজে পিচ্ছিল হয়ে যায়। পথের বিভিন্ন জায়গায় কাদা-পানি জমে থাকে। পথিক কাপড় গুটিয়ে এবং তা মাথায় দিয়ে পথ চলতে থাকে অতি সাবধানে। শহর এলাকায় একটি বর্ষণমুখর দিন ভিন্ন চিত্র উপস্থাপন করে। তবে এ সময় মানুষ ঘরে বসে থাকলেও হকারগণ রাস্তায় বের হয়ে পড়ে। রাজ্যের যত গান, যত সুর, যত কথা, যত স্মৃতি সবই বর্ষণমূখর দিনে মনের কোণে ভেসে উঠে , তা মানুষকে বিষন্ন করে তােলে আবার কারো কারো মন রোমাঞ্চ করে তোলে । শহর বা গ্রাম সবখানেই বর্ষণমূখর দিনে কর্মচঞ্চলতা থেমে যায়,স্বাভাবিক জীবনে সাময়িক ছেদ ঘটে।দিনমজুরদের কারো অর্ধাহারে বা অনাহারে দিন কাটাতে হয় । বর্ষণমুখর দিনের অভিজ্ঞতা একেক জনের একে রকম ।

বৃক্ষরোপণ

আমাদের বাড়ির চারপাশে, রাস্তাঘাটে, পার্কে, বাগানে, রেল লাইনের ধারে এবং পতিত জমিতে তথা যেকোনো ফাকা স্থানে চারা গাছ লাগানােই হলো বৃক্ষরােপণ। গাছপালা আমাদের পরিবেশের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। গাছপালা নানাভাবে আমাদেরকে সাহায্য করে। গাছপালা আমাদেরকে ফুল ও ফল দেয়। তীব্র রােদের সময় ছায়া দেয়। গাছপালা বৃষ্টি হতে সহায়তা করে এবং ভূমির ক্ষয় রােধ করে। গাছ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। পরিবেশ সংরক্ষণে বৃক্ষ রােপণ খুবই জরুরি। বিশ্বের তাপমাত্রা দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে। পৃথিবীর চারপাশে কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাসের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বাড়ছে। আমাদের দেশের পরিবেশ বিশেষ করে শহর অঞ্চলের পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। আমাদের বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। জ্বালানি ও বাসস্থানের প্রয়ােজনে মানুষ নির্বিচারে গাছ কাটছে ও বন জঙ্গল নিধন করছে। এভাবে গাছকাটার ফলে বনাঞ্চলের গাছপালা উজার হয়ে যাচ্ছে। গাছপালা বায়ু দূষণ রােধ করতে সহায়তা করে। বনাঞ্চল পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতেও সাহায্য করে। একটি দেশের পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষার জন্য কমপক্ষে তার মোট ভূখণ্ডের ২৫% বনভূমি থাকা প্রয়ােজন। কিন্তু আমাদের দেশের ভূখণ্ডের মাত্র ৯% বনভূমি আছে। বর্তমান হারে বনের গাছপালা কাটা বন্ধ না হলে অচিরেই আমাদের বনাঞ্চল গাছপালা শূন্য হয়ে পড়বে। আমাদের দেশে ও বনে গাছপালা না থাকলে দেশ একদিন মরুভূমিতে পরিণত হবে। তাই দেশের পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে আমাদেরকে বেশি করে গাছ লাগাতে হবে , বৃক্ষরােপণ কর্মসূচি পালন করতে হবে ।

স্কুল গ্রহ্নাগার

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের যে ভবন বা কক্ষে ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকদের পড়ার জন্য এবং ধার দেয়ার জন্য বই পুস্তক,সংবাদপত্র ও ম্যাগাজিন রাখা ইয় তাকে স্কুল গ্রন্থাগার বলা হয়। স্কুল গ্রন্থাগার একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি সাধারণত স্কুলের একপ্রান্তে বা আলাদা ভবনে অবস্থিত থাকে । অধিকাংশ স্কুলে এটি নিচতলায় অবস্থিত। একটি স্কুল গ্রহ্নাগার ভালোভাবে সুসজ্জিত থাকে। সাধারণত স্কুল গ্রহ্নাগারে দুইটি অংশ থাকে। একটি অংশে ছাত্রছাত্রীদের পড়ার জন্য একটি পাঠ কক্ষ আছে এবং ছাত্রদের মাঝে বই ইস্যু করার জন্য কাউন্টার আছে। অন্য অংশে আলমারী এবং বইয়ের তাকে বই সাজিয়ে রাখা হয়। পাঠ কক্ষে নির্দিষ্ট সংখ্যক চেয়ার এবং টেবিল আছে। একটি স্কুল গ্রহ্নাগারে বিভিন্ন ধরনের বই থাকে। এগুলাের মধ্যে পাঠ্য পুস্তক, উপন্যাস, গল্প, নাটক, কবিতা ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত। তাছাড়া গ্রন্থাগারে দৈনিক পত্রিকা ও ম্যাগাজিনও রাখা হয়। ছাত্রদের মাঝে বই ইস্যু করার জন্য একজন গ্রন্থাগারিক থাকে। বই জমা দেয়া ও ধার নেওয়ার জন্য প্রত্যেক ছাত্রের একটি গ্রন্থাগার কার্ড থাকে। স্কুল গ্রন্থাগার ছাত্রদের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। ছাত্ররা গ্রন্থাগারের বিভিন্ন বইয়ের সাহায্য নিয়ে নােট তৈরি করতে পারে। তাছাড়া স্কুলের টিফিন পিরিয়ডে বা অবসর সময়ে গ্রন্থাগারের পাঠকক্ষে বসে বই পড়ে তাদের সময়ের সদ্ব্যবহার করতে পারে। এ কারণে স্কুলের গ্রন্থাগার ছাত্রদের নিকট একটি আকর্ষণীয় স্থান।

শীতের সকাল

শীতের সকালে চারদিকে শুধু ঘন কুয়াশা দেখা যায় । মনে হয় পৃথিবী কুয়াশার চাদর মুড়ি দিয়ে ঘুমােচ্ছে । সকালে কনকনে হিমেল হায়া বইতে থাকে। বাংলাদেশে শীতের সকালের প্রকৃতি হয় শান্ত ও মধুর । শীতের সকালে হাড় কাপানাে শীতে মানুষ জড়সড় হয়ে ঘরে বসে থাকে। অনেকে দেরিতে ঘুম থেকে উঠে। সূর্যও দেরিতে উঠে এবং মানুষ দেরি করে কাজে যায়। গাছের পাতা, ফসলের মাঠ , মাঠের সবুজ ঘাস সবই কুয়াশার শিশিরে ভরে যায়। টিনের ঘরের চাল থেকে সারারাত টপটপ করে ফোটায় ফোটায় শিশির ঝরতে থাকে। পুরাে প্রকৃতি কুয়াশায় আচ্ছন্ন হয়ে যায়। সহসা দূরের কোন কিছু দেখা যায় না। শীতের সকালে মানুষ গরম কাপড় পরিধান করে। গ্রামাঞ্চলের মানুষ চাদর মুড়ি দিয়ে শীত নিবারনের চেষ্টা করে। গায়ের মানুষ খড়কুটা পুড়িয়ে আগুনের কুণ্ড তৈরি করে এবং আগুনের চারপাশে বসে দু’হাতের তালু রেখে শীত নিবারনের চেষ্টা করে। শীতের সকালে সুর্যের রশ্মি সকলের নিকট পরম প্রত্যাশার বন্ধু। সূর্যের রশি যখন শিশির সিক্ত গাছের পাতা কিংবা মেঠো পথেৱ ঘাসের উপর পতিত হয় তখন এক মনোমুগ্ধকর দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। শীতের সকাল গরিবের জনা কষ্টের হলেও ধনী লােকেরা শীতের সকালকে উপভোগ করে। তাদের বাড়িতে সকালে নানা ধরনের সুষাদু খাবার রান্না হয় এবং তারা খুব মজা করে শীতের বিশেষ ধরনের পিঠা খায়। ভাপপিঠা,খেজুরের রস ও পায়েস শীতের সকালের খুবই জনপ্রিয় খাবার। শীতের সকালে প্রকৃতি ভিন্নরূপ ধারণ করে ।

ইন্টারনেট

‘ইন্টারনেট’ বা ‘অন্তর্জাল’ হলো ইন্টারনেটওয়ার্কের (ওহঃবত্হবঃড়িত্শ) সংক্ষিপ্তরূপ। ইন্টারনেট এমন এক প্রযুক্তি, যা সারা পৃথিবীজুড়ে বিস্তৃত পরস্পরের সঙ্গে সংযুক্ত অনেক কম্পিউটার নেটওয়ার্কের সমষ্টি। এটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত। আইপি বা ইন্টারনেট প্রোটোকল নামের এক প্রামাণ্য ব্যবস্থার মাধ্যমে ডাটা বা তথ্য আদান-প্রদানের গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক হলো ইন্টারনেট। ইন্টারনেট হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার পরিকাঠামো কম্পিউটারগুলোর মধ্যে একটি আন্তর্জাতিক তথ্য যোগাযোগব্যবস্থা স্থাপন করে। ১৯৬০-এর দশকে মার্কিন সামরিক বাহিনীর গবেষণা সংস্থা অ্যাডভান্সড রিসার্চ প্রজেক্টস এজেন্সি পরীক্ষামূলকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণাগারের মধ্যে এ যোগাযোগব্যবস্থা গড়ে তোলে। সেটিই সূচনা। বর্তমানে আধুনিক বিশ্বে ইন্টারনেট যোগাযোগব্যবস্থার প্রধান মাধ্যম। তথ্য আদান-প্রদান, সংবাদপত্র, পড়া, সামাজিক, যোগাযোগ, পড়াশোনা, গবেষণা, টেলিভিশন দেখা, রেডিও শোনা, তথ্য সংগ্রহ ইত্যাদি তথা মানুষের পুরো জীবনব্যবস্থাই হয়ে উঠেছে ইন্টারনেটনির্ভর। মানুষের কর্মকাণ্ড পরিচালনা হয়ে উঠেছে সহজ ও সাশ্রয়ী। ইন্টারনেট পৃথিবীর দূরত্বকে কমিয়ে দিচ্ছে। পুরো পৃথিবী ক্রমান্বয়ে গ্লোবাল ভিলেজে পরিণত হচ্ছে। মানুষ ইন্টারনেটের ওপর নির্ভরশীল হয়ে এর সুফল ভোগ করছে। তাই নিঃসন্দেহে বলা যায়, আধুনিক জীবনযাত্রায় ইন্টারনেটের গুরুত্ব অপরিসীম।

আমার প্রিয় শিক্ষক

সৃষ্টির সেরা মানুষ সামাজিক ও রাজনৈতিক জীব। জীবনপথে চলতে চলতে তাকে নানা মানুষের সংস্পর্শে আসতে হয়। আর নানা মানুষের সংস্পর্শে থেকে মানুষকে জীবনসংগ্রামের অনেক কিছুই শিখে নিতে হয়। তেমনি আমিও প্রতিনিয়ত শিখছি। অসংখ্য মানুষের ভেতর থেকে যিনি আমাকে সবচেয়ে বেশি শিখিয়েছেন, তিনি হচ্ছেন আমার প্রিয় শিক্ষক আনসার আলী। তিনি ফুলকোচা উচ্চ বিদ্যালয়ের বাংলার শিক্ষক, এলাকায় ‘পণ্ডিত স্যার’ নামে পরিচিত। সুন্দর, লম্বা, শ্বেত-শুভ্র-শ্মশ্রুমণ্ডিত। তাঁকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি, আবার ভয়ও পাই বেশি। তিনি এত ভালো পড়ান, যা বলে প্রকাশ করতে পারব না। বাংলা ব্যাকরণের মতো নীরস বিষয়কেও খুব সহজ-সরল করে উপস্থাপন করেন। তাঁর শেখানো ‘ছয়টি কারক নির্ণয়ের সহজ কৌশল’ আমি কখনোই ভুলব না। ইচ্ছা হয়, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েও যদি তাঁকে পেতাম। তিনি শুধু একজন শিক্ষক হিসেবেই নয়, সমাজের একজন বিদ্যোৎসাহী ব্যক্তি হিসেবেও সমধিক পরিচিত। নানা ধরনের সমাজসেবামূলক কাজেও আমরা তাঁকে দেখতে পাই। মসজিদ-মাদ্রাসার নানা স্বেচ্ছাসেবী কর্মকাণ্ড থেকে সমাজের নানা পর্যায়ের নানা শুভকাজে তাঁর অগ্রগণ্য ভূমিকা চোখে পড়ার মতো। একজন সাধারণ মানুষ হিসেবেও তিনি অনুসরণযোগ্য। তাঁর বুক টান করে মাথা উঁচু করে আত্মবিশ্বাসী ভঙ্গিতে হেঁটে যাওয়ার দৃশ্য যতবার দেখেছি, ততবারই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছি নিজেকে বদলে ফেলার জন্য, দেশের স্বার্থে শুভকাজ করার জন্য। তিনি স্পষ্টভাষী, সব অশুভ যেন তাঁর পায়ের কাছে এসে মাথা নত করেছে। প্রজন্মের পর প্রজন্মকে যিনি আলোর সন্ধান দিচ্ছেন, তাঁর সামনে তো অন্ধকার মাথা নত করবেই। আর এই দৃশ্যই যেন চাক্ষুষ হয়ে এক সন্ধ্যায় আমার সামনে ধরা পড়েছিল—ফুলকোচা বাজারে স্যারের সঙ্গে দেখা। বাজার সেরে তিনি সন্ধ্যার আধো আলো-অন্ধকারে হেঁটে হেঁটে চলে যাচ্ছেন। পরনে লুঙ্গি আর সাদা পাঞ্জাবি। দূর থেকে দেখে মনে হচ্ছিল যেন সামনের অন্ধকার দূর করে আলো ছড়াতে ছড়াতে দৃপ্ত পায়ে হেঁটে যাচ্ছেন আমাদের প্রিয় আনসার স্যার।

আমার প্রিয় বই

জীবনপথে চলতে চলতে নানা বিষয়, নানা ঘটনা মানুষের মনে দাগ কাটে, প্রিয় হয়ে ওঠে। অনেক বই আমি পড়েছি, পড়েও যাচ্ছি নিয়মিত; কিন্তু একটি বই আমার যেমন ভালো লেগেছে, এত ভালো লাগেনি আর কোনো বই। আমার প্রিয় সেই বইটি হচ্ছে ‘জীবন আমার বোন’। বাংলাদেশের অন্যতম শক্তিশালী কথাসাহিত্যিক মাহমুদুল হকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ উপন্যাস এটি। ‘জীবন আমার বোন’ একটি অ্যান্টি-রিয়ালিস্ট উপন্যাস। তার পটভূমি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকাল। ওই সময়ের একজন ব্যক্তির চোখের লেন্সে ধারণ করা এক টুকরো উত্তাল বাংলাদেশ প্রতিফলিত হয়েছে ‘জীবন আমার বোন’ উপন্যাসে। সাধারণত মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাসে লেখকেরা উপন্যাসের নায়ককে মুক্তিযোদ্ধা বানান। সব ঘটনাপ্রবাহের কেন্দ্রবিন্দুতে উপন্যাসের নায়ককে রেখে ঘটনার প্রত্যক্ষ বর্ণনা হাজির করেন। কিন্তু মাহমুদুল হক এখানে সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। ‘জীবন আমার বোন’ মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করলেও যুদ্ধ আর বীরত্বগাথা নিয়ে মেতে থাকেনি পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা। ওই সময়ের একজন সাধারণ মানুষের দৃষ্টিকোণ থেকে মুক্তিযুদ্ধ এবং তার আগের রাজনৈতিক অবস্থা দেখানোর চেষ্টা করেছেন মাহমুদুল হক। বলতে গেলে মাহমুদুল হকই মুক্তিযুদ্ধকালীন রাজনৈতিক পটভূমিতে অবস্থান করা সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের প্রকৃত ইতিহাস নির্মাণ করেছেন। কারণ বিপুল জনগোষ্ঠীর তুলনায় মুক্তিযোদ্ধা আর রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত মানুষের সংখ্যা কমই ছিল। মাহমুদুল হক সেই সংখ্যাগরিষ্ঠের চিত্র অঙ্কন করেছেন। উপন্যাসের নায়ক ‘খোকা’ও একজন সাধারণ মানুষ। উপন্যাসের শেষ অধ্যায়ে ঔপন্যাসিকও স্বীকার করে নিয়েছেন ‘খোকা’ গল্পের এখানেই সমাপ্তি, কেননা খোকা এমন কিছুই করেনি যে ইতিহাসের পাতায় তার নাম থাকবে। মুমূর্ষু বাঙালি জাতি ইতিহাস তৈরির নেশায় মেতে উঠেছিল; এক পলায়ন ছাড়া সেখানে খোকার কোনো ভূমিকা নেই। ইতিহাসের ধূসর আড়ালে খোকারই তো প্রথম মুখ লুকোবার কথা।

শিশু অধিকার

শিশুরাই জাতির ভবিষ্যত। তারা রাষ্ট্র ও সমাজের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাই তাদেরও কিছু অধিকার আছে। কিন্তু আমরা শিশুদের অধিকারের ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। জাতিসংঘের জেনেভা কনভেনশন শিশুদের কিছু মৌলিক অধিকার চিহ্নিত করেছে। কনভেনশন অনুযায়ী , শিশুদেরকে সকল প্রকার হুমকি থেকে রক্ষা করতে হবে। তাদের শরীরিক ও মানসিক বিকাশের সুযােগ দিতে হবে। শিশুদের চাওয়া-পাওয়া, পছন্দ ও অপছন্দের প্রতি সম্মান দেখাতে হবে। শিশুদেরকে পরম স্নেহ,ভালোবাসা ও মায়া-মমতায় গড়ে তুলতে হবে। তাদেরকে স্বাস্থকর পরিবেশে বড় হওয়ার সুযোগ দিতে হবে। তাদেরকে শারীরিকভাবে প্রহার বা নির্যাতন করা যাবে না। জাতিসংঘ সনদ অনুযায়ী, ১৮ বৎসর বয়সের নিচের ছেলেমেয়েদেরকে শিশু হিসেবে গণা করা হবে। শিশুদের সুস্থ মানসিক ও শারীরিক বিকাশের জন্য কঠোর শ্রমে নিয়োগ করা যাবে না। আমাদের দেশের শিশুরা তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত। শিশু শ্রম বেআইনী হলেও আমাদের দেশে গরীব শিশুরা কঠোর পরিশ্রম করে। তারা তাদের বাবা-মার সাথে রাস্তার পাশে ইট ও পাথর ভাঙ্গে। তারা হােটেল রেস্তোরা, টেম্পুর হেলপার হিসেবে কাজ করে। অনেক শিশু ধনী ব্যক্তিদের বাসায় চাকর-চাকরাণী হিসেবে কাজ করে। অধিকন্তু, তাদেরকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়। শিশুরা অস্বাস্থকর পরিবেশে কাজ করতে বাধ্য হয়। দরিদ্র পরিবারের শিশুরা স্কুলে যায় না , আবার অনেকের ইচ্ছা থাকলেও পরিস্তিতির কারণে যেতে পারে না । বস্তুত, শিশুদের প্রতি আমাদের মানবিক আচরণ করতে হবে এবং তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যাবে না।

বিজ্ঞান মেলা

ছাত্র ছাত্রীদের মাঝে বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়ের উপর ব্যবহারিক জ্ঞান প্রদান করার জন্য ও বিজ্ঞান বিষয়ে আগ্রহী করে তোলার জন্য যে মেলা অনুষ্ঠিত হয় তাকে বিজ্ঞান মেলা বলে। বিজ্ঞান মেলায় স্কুল ও কলেজের ছাত্রছাত্রীরা বৈজ্ঞানিক মডেল, চার্ট ও যন্ত্রপাতির প্রদর্শন করে। ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে বিজ্ঞান বিষয়ে উৎসাহ সৃষ্টি করাই বিজ্ঞান মেলার লক্ষ্য। প্রতি বৎসর সরকার জাতীয় বিজ্ঞান সপ্তাহ পালন করে। এরই অংশ হিসেবে প্রতি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে স্কুল ও কলেজের ছাত্রছাত্রীদের অংশগ্রহণে বিজ্ঞান মেলা অনুষ্ঠিত হয়। বিজ্ঞান মেলায় বিভিন্ন স্কুল ও কলেজ ও বিজ্ঞান ক্লাব থেকে স্টল দেয়া হয়। এসব স্টলে বিজ্ঞানের বিস্ময় জিনিস সম্পর্কে দর্শকদের জ্ঞান দেয়া হয়। প্রতিটি স্টলে উপস্থিত দর্শকদের নিকট একজন ক্ষুদে বিজ্ঞানী তার প্রজেক্ট ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দেয়। দর্শকবৃন্দ বিশেষ করে মেলার ভ্রমণরত শিশু-কিশোরেরা অতি উৎসাহ নিয়ে বিজ্ঞানের বিভিন্ন তত্ত্বের ব্যবহারিক প্রয়োগ দেখে। এটি তাদের কে বিজ্ঞান চর্চায় অনুপ্রাণিত করতে পারে । তাছাড়া সাধারণ মানুষের মধ্যেও বিজ্ঞান মেলা প্রচুর উৎসাহ ও কৌতূহল সৃষ্টি করে। তারা তাদের ঘরের ব্যবহার্য বিভিন্ন উকরণের কার্যাবলি দেখে মুগ্ধ হন। বিজ্ঞান মেলা ছাত্রছাত্রীদের দ্বারা হলেও এটি সকলের জন্য উন্মোক্ত থাকে। তাই বিজ্ঞান মেলায় প্রচুর লোকের জমায়েত হয়। এক কথায় বিজ্ঞান মেলা উৎসবের রূপ ধারণ করে। বিজ্ঞান মেলায় অংশগ্রহণকারীদেরকে সনদ দেয়া হয় এবং শ্রেষ্ঠ প্রজেক্টের জন্য আলাদা পুরস্কার প্রদান করা হয়। মেলা ছেলে মেয়েদের বিজ্ঞান শিক্ষায় আগ্রহী করে তোলে । বিজ্ঞান মেলা একই সাথে নিজের প্রতিভা তুলে ধরা ও অন্যকে বিজ্ঞান চর্চায় উত্সাহী করে তোলার মাধ্যম ।

খাদ্যে ভেজাল

খাদ্যে ভেজাল দেশের একটি ভয়াবহ সমস্যা ও উদ্বেগের বিষয়। ভেজাল খাদ্য বলতে খাদ্য দ্রব্যের সাথে নিম্ন মানের ক্ষতিকর ও অপ্রয়ােজনীয় রাসায়নিক জিনিস মেশানাে বুঝায়। ভেজাল খাদ্য দ্রব্য জনযাস্বাস্থের জন্য মারাত্মক হুমকিযুপ। ভেজাল খাদ্যে আজ বাজার সয়লাভ হয়ে গেছে । মাছ, মাস, চিনি, লবণ, চাল, আটা, ঘি, মিষ্টি, ভোজ্য তৈল, ঔষধ সর্বত্রই ভেজাল। বাজারে প্রায় সকল খাদ্যদ্রব্য, মাছ, মাংস, ফলমূল (আপেল,আঙ্গুর ইত্যাদি, এমনকি কলাদেও) ও তরিতরকারি বিষাক্ত ফরমালিন, কার্বাইড এবং অন্যান্য রাসায়নিক পদার্থ মেশানাে । ফল, শাক-সবজি ও বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রীর পচন রােধকল্পে ও এগুলাে সরক্ষণের জন্য অসাধু ব্যবসায়ীরা বিষাক্ত ফরমালিন, কার্বাইড ও অন্যান্য রাসায়নিক মেশায়। আবার কিছু কিছু ফলকে পাকানাের জন্য ও রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়। এসব রাসায়নিক মিশ্রিত ভেজাল খাদ্য ও ফল মানবদেহ ও স্বাস্থের জন্য হুমকিস্বরুপ। মাছে ফরমালিন ব্যবহার করে মাছ তাজা রাখা হয়। ফাস্টফুড জাতীয় খাদ্যে ক্ষতিকর রাসায়নিক রং ও খাবার সুস্বাদু করার জন্য ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণে ব্যবহার করা হয় । ভেজাল খাদ্য মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। ভেজাল খাদ্য খেয়ে মানুষ ক্রমে ক্রমে ক্যানসারসহ নানা দুরারােগ্য ব্যাধিতে ভুগে ও মৃত্যুমুখে পতিত হয়। খাদ্যে ভেজাল নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সরকারের বিভিন্ন দফতরের নিয়মিত বাজার মনিটরিং করতে হবে । কাজেই যে কোন মূল্যে খাদ্যে ভেজালের হাত থেকে আমাদের জাতিকে রক্ষা করতে হবে।

আরো পড়ুনঃ-

Download From Google Drive

Download

Download From Yandex

Download

👀 প্রয়োজনীয় মূর্হুতে 🔍খুঁজে পেতে শেয়ার করে রাখুন.! আপনার প্রিয় মানুষটিকে “send as message”এর মাধ্যমে শেয়ার করুন। হয়তো এই গুলো তার অনেক কাজে লাগবে এবং উপকারে আসবে।