কম পড়ে BCS প্রিলি পাশের সহজ টেকনিক – গাজী মিজানুর রহমান

0
352

কম পড়ে BCS প্রিলি পাশের সহজ টেকনিক 

গাজী মিজানুর রহমান

BCS প্রিলি পাশের সিক্রেট টিপস

অনেকেই প্রায় বলে থাকে, “স্যার, বিসিএস ক্যাডার হওয়ার বড় স্বপ্ন কিন্তু বেশি পড়তে পারি না!” আবার অনেকে বলে, “স্যার, চাকরি করি বেশি পড়ার সুযোগ নেই, কীভাবে অল্প পড়ে বিসিএস পাশ করা যাবে?” আবার এমন অনেকে বলতে দেখেছি, “স্যার, সংসারে অনেক বেশি সময় দিতে হয়। বেশি পড়ার সময় পাই না, কীভাবে অল্প পড়ে যদি বিসিএস পাশ করা যায়?”

কম পড়ে BCS প্রিলি পাশের সিক্রেট টিপস

আমি আজ আমার টানা ৬টি বিসিএস প্রিলি পাশের বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে প্রশ্নগুলোর উত্তর দেয়ার চেষ্টা করব। এখানে বলে রাখি, এই পোস্টটি মূলত কম পড়ুয়াদের জন্য। যারা বেশি বেশি পড়তে পারেন বা বেশি পড়ার সময় ও সুযোগ আছে, তারা চাইলে পোস্টটি এড়িয়ে যেতে পারেন।

অনেকে মনে করে, বিসিএস পাশ করা অনেক কঠিন। অনেক বই পড়তে হয়। অনেক বেশি পড়তে হয়। আবার যারা কম পড়ে বিসিএস ক্যাডার হয়ে গেছে তারা মনে করে, বিসিএস ক্যাডার হতে বেশি পড়া লাগে না; শুধু কিছু টেকনিক ফলো করে পরিকল্পনা মাফিক পড়লেই ক্যাডার হওয়া সম্ভব।

আমার দৃষ্টিকোণ থেকে বলবো, উপরিউক্ত দুটি মতামতই সঠিক। তবে, আপনি কম পড়েন কিংবা বেশি পড়েন কিছু টেকনিক ফলো না করলে আপনি কখনোই বিসিএস পাশ করতে পারবেন না! আমার ৬টি বিসিএস প্রিলি পাশের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি।

একনজরে টেকনিক সমুহঃ

এখন প্রশ্ন হলো টেকনিকগুলো কী?

টেকনিক-১: আপনাকে আগে দেখতে হবে বিসিএস প্রিলিমিনারিতে কোন কোন টপিক থেকে বেশি প্রশ্ন আসে, অর্থাৎ বেশি Important সেগুলো সিলেক্ট করুন। সিলেক্ট করার পর তা পড়ে শেষ করে ফেলুন। এর পর পরীক্ষার মাঝেমধ্যে আসে কিন্তু সবসময় আসে না সেই টপিকগুলো পড়ে ফেলুন! এভাবে বেশি Important ও তুলনামূলক কম Important বিষয়গুলো ভালো করে পড়ে ফেললে আপনার BCS প্রিপারেশন ৭০-৭৫% কাভার হয়ে যাবে, ইনশাআল্লাহ!

টেকনিক-২: পড়ার সময় সেই পড়াগুলো মনে রাখার যথাসাধ্য টেকনিক অবলম্বন করুন, যাতে দীর্ঘ সময় ধরে মনে থাকে।

টেকনিক-৩: যে পড়াগুলো মনে থাকে না কিন্তু পরীক্ষার জন্য বেশি Important সেগুলো বার বার পড়ুন এবং পড়ার সময় হালকা শব্দ করে পড়ুন যেন কান পর্যন্ত শব্দ পৌঁছায়। এরপরও মনে না থাকলে লিখে লিখে পড়ুন।

টেকনিক-৪: সাল, তারিখ ও অপরিচিত নাম (যেগুলো পড়ার পর ভুলে যান) বার বার খাতায় লিখে শব্দ করে পড়ুন।

টেকনিক-৫: কনফিউজিং প্রশ্নগুলো পাশাপাশি লিখে খেয়াল করে পড়বেন। যেন পরীক্ষার হলে বিভ্রান্ত না হতে হয়।

টেকনিক-৬: প্রত্যেক সপ্তাহে আগের পড়াগুলো রিভিশন দিন ও সম্ভব হলে রিভিশনের পড়ার মডেল টেস্ট দিন।

টেকনিক-৭: সাম্প্রতিক সাধারণ জ্ঞান এখন না পড়ে শুধু পরীক্ষার ৭-১০ দিন আগে পড়ুন। কারণ সাম্প্রতিক সাধারণ জ্ঞান প্রতি নিয়ত আপডেট হয়। তাই আগে পড়লে খুব একটা লাভ নাও হতে পারে।

টেকনিক-৮: পরীক্ষার আগে বাজার থেকে একটি ভালো মানের মডেল টেস্ট (BCS Real Model Test পড়া যেতে পারে) থেকে বেশি বেশি মডেল টেস্ট দিন। এতে করে আপনার দুর্বল পয়েন্ট পরীক্ষার আগে বের করতে পারবেন।

টেকনিক-৯: অপ্রয়োজনে ফেইসবুক ইন্টারনেট ব্যবহার করবেন না। অর্থাৎ এগুলো কম ব্যবহার করবেন।

টেকনিক-১০: Final কথা হচ্ছে, পড়ার সময় আপনি ফেইসবুক বা মেসেঞ্জার অন রেখে পড়তে বসবেন না। অর্থাৎ, আপনি পড়ছেনও আবার ফেইবুকও চালাচ্ছেন বা মেসেঞ্জারেও চ্যাটিং করছেন এমনটি করবেন টেকনিক-১০: Final কথা হচ্ছে, পড়ার সময় আপনি ফেইসবুক বা মেসেঞ্জার অন রেখে পড়তে বসবেন না। অর্থাৎ, আপনি পড়ছেনও আবার ফেইবুকও চালাচ্ছেন বা মেসেঞ্জারেও চ্যাটিং করছেন এমনটি করবেন না।

অল্প সময়ে ভালো প্রস্তুতির ক্ষেত্রে আপনাকে যেই বইগুলো হেল্প অল্প সময়ে ভালো প্রস্তুতির ক্ষেত্রে আপনাকে যেই বইগুলো হেল্প করবে-

১। BCS Preliminary Analysis

২। প্রফেসর’স জব সল্যুশন (জব সল্যুশনস পড়ার সময় না থাকলে বিসিএস প্রিলি প্রশ্নব্যাংক ব্যাখ্যাসহ পড়বেন; বিশেষ করে ৩৫তম-৪০তম প্রিলি পর্যন্ত। অর্থাৎ, নতুন সিলেবাসে অনুষ্ঠিত প্রশ্নগুলো।)

৩। শাহীন’স ম্যাথ বা আরিফুর রহমানের শর্টকাট ম্যাথ অথবা প্রফেসর’স গণিত স্পেশাল (যে কোনো একটি পড়লেই চলবে। ম্যাথে বেশি বেশি প্র‍্যাক্টিস এর বিকল্প নেই।)

৪। মাসিক ক্যারেন্ট অ্যাফেয়ার্স (কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স পড়ার সময় না পেলে পরীক্ষার আগে একটি ভালো সাম্প্রতিক সাধারণ জ্ঞান ছোট বই কিনে দাগিয়ে দাগিয়ে পড়বেন।)

৫। ক্যারেন্ট অ্যাফেয়ার্স বিসিএস বিশেষ সংখ্যা।

*মনে রাখবেন বিসিএস প্রিলি পাশ করতে ২০০ নাম্বারে ১৮০-১৯০ পাওয়া লাগে না। যে কোনো প্রশ্নে বিসিএস প্রিলি কেবল ১২০ পেলেই সেইফ জোন ধরতে পারেন! তাই বলি, “কম পড়বেন কিন্তু Important বিষয়গুলো গুছিয়ে পড়বেন”। আরেকটি কথা মনে রাখবেন, “একটি বই আর একটি ভালো সিদ্ধান্ত, বদলে দিতে পারে আপনার জীবন।”

*সবাই ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন, নিরাপদে থাকবেন এবং জীবনে পরিশ্রম করলে যেন সফল হোন সেই শুভ কামনা রইল। আর হতাশ হওয়ার কিছু নেই; কখনো হতাশ হবেন না। সব সময় আল্লাহর উপর ভরসা রাখুন। আল্লাহ সব সময় পরিশ্রমীদের সাথেই আছেন। আরেকটি বিষয় মনে রাখতে হবে একনিষ্ঠ ও সৎ উদ্দেশ্যে পরিশ্রম কখনো বিফলে যায় না।

ধন্যবাদ সবাইকে। সাথেই থাকুন।

গাজী মিজানুর রহমান

৩৫তম বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডার,

সাবেক সিনিয়র অফিসার (পূবালী ব্যাংক লিমিটেড), সাবেক সহকারী শিক্ষক, সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় (৩৪তম BCS নন-ক্যাডার)