ব্যাখ্যাসহ কারক ও বিভক্তি মনে রাখার টেকনিক
পিডিএফ ডাউনলোড
কারকের ব্যাখ্যা : না পড়লেই মিস!!
কারক অধ্যায়টি সম্পূর্ণ একটি অনুধাবনমূলক বিষয়, অর্থাৎ আপনি মুখস্থ করে কোনো ভাবেই পার পাবেন না। কারক নির্ণয়ে দক্ষ হতে হলে বাক্যস্থিত ক্রিয়াপদরে সাথে প্রশ্নে চাওয়া পদটির সম্পর্ক বুঝতে হবে। প্রচলিত কিছু নিয়ম আছে সেগুলো দিয়ে আপনি যেগুলো পারবেন, হয়তো সেগুলো পরীক্ষায় তেমন আসে না। সুতরাং অনুধাবনমূলক জ্ঞান বাড়াতে হবে বা কাজে লাগাতে হবে। চলুন নিচে কিছু গুরুত্বপূর্ণ একাধিকবার পরীক্ষায় আসা কারক নির্ণয়ের ব্যাখ্যা সংযোজন করা হলো।
১. সাদা মেঘে বৃষ্টি হয় না। এখানে ‘মেঘ’ কোন কারক?
ব্যাখ্যা ও সঠিক উত্তর: প্রশ্নটি প্রথম ২০১৩ সালে প্রাক-প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় আসে, যা পরবর্তীতে বিভিন্ন পরীক্ষায় আসতে দেখা যায়। প্রশ্নটি বেশ সহজ তবে একটু ছদ্মবেশী। প্রশ্নে যদি বলা হতো ‘মেঘে বৃষ্টি হয়।’ তাহলে সবাই এখানে ‘মেঘ’কে অপাদান কারক দিত।
একটা কথা মনে রাখবেন, বাক্যস্থিত ক্রিয়াপদ অনুযায়ী কারক নির্ণীত হয়, এবং ক্রিয়াপদটি নেতিবাচকে থাকলেও কারক নির্ণয় করতে হবে অস্তিবাচক (হ্যাঁবাচক) ধরে। কারণ মেঘের সাথে বৃষ্টির সম্পর্কটাই মূখ্য বিষয়। উপরিউক্ত বাক্যস্থিত ‘সাদা’ পদটির সাথে ক্রিয়ার কোনো সম্পর্ক নেই, অর্থাৎ ‘সাদা’ পদটি সম্বন্ধপদ। তাহলে বাক্যটি দাঁড়াবে—মেঘে বৃষ্টি হয়।
স্থান ও সময়বাচক অপাদান, অধিকরণ নির্ণয়ের সূত্র
Starting Point (স্থান/ সময়) = অপাদান
Ending Point (স্থান/ সময়) = অধিকরণ
এবার লক্ষ করুন, মেঘে বৃষ্টি হয়। অর্থাৎ ‘মেঘ’ বৃষ্টির Starting Point (স্থান) = অপাদান। সুতরাং সাদা মেঘে বৃষ্টি হয় না। এখানে ‘মেঘে’ অপাদান কারকে ৭মী বিভক্তি।
অনুরূপ নেতিবাচক বাক্যের কারক: সব ঝিনুকে মুক্তা মেলে না। (অপাদান) বাবাকে ভয় পায় না কে? (অপাদান) বাবা বাড়ি নেই। (অধিকরণ) পড়ায় আমার মন বসে না। (অধিকরণ)।
২. ‘নীল আকাশের নিচে আমি রাস্তা চলেছি একা’-কোন কারকে কোন বিভক্তি?
ব্যাখ্যা ও সঠিক উত্তর: প্রশ্নটি ঢাবি (গ ইউনিট) ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম এসে ছিল, যা পররর্তীতে ৪-৬টি পরীক্ষায় আসতে দেখা যায়। এ প্রশ্নটি একটু কঠিন করে চিন্তা করতে হবে।
বাক্যস্থিত ‘রাস্তা’ অর্থাৎ একটা স্থান এই চিন্তা করে অনেকেই এই প্রশ্নের উত্তর অধিকরণ দাগাবে, কিন্তু তা ভুল হবে। প্রশ্নের ক্রিয়ার দিকে ভালো করে লক্ষ করে দেখুন, ‘চলেছে’ অর্থাৎ স্থির নেই। ধরে নিলাম লোকটি আকাশের নিচে রাস্তা ব্যবহার করে কোথাও যাচ্ছে। তার মানে, এখানে ‘রাস্তা’ কর্তার কোথাও যাওয়ার একটি মাধ্যম, অর্থাৎ করণ কারকে শূন্য বিভক্তি।
সর্তকতা ও সাবধানতা:
বাক্যটি একটু পরিবর্তন করে আসতে পারে। যেমন: “নীল আকাশের নীচে আমি রাস্তায় চলেছি একা।”
এই বাক্যে ‘রাস্তায়’ পদটিতে ‘৭মী’ বিভক্তি থাকায় অনেকেই ‘অধিকরণ’ কারক দিয়ে থাকে, কিন্তু এটিও ভুল। কারণ অনেকেই মনে করে থাকে বিভক্তি পরিবর্তন হলে কারকও পরিবর্তন হয়ে যায়, যা ভুল। মনে রাখবেন, বিভক্তির জন্য কখনও কারক পরিবর্তন হয় না; কারক পরিবর্তন হয় ক্রিয়াপদরে কারণে। আবার ‘রাস্তায়’ না বলে ‘রাস্তা দ্বারা’ বললেও করণ কারক হবে। অর্থাৎ কারক একই থাকবে, শুধু বিভক্তি পরিবর্তন হবে।
৩. লোকটা জাতিতে বৈষ্ণব। কোন কারক?
ব্যাখ্যা ও সঠিক উত্তর: জাতির দ্বারা সে বৈষ্ণব হয়েছে, অর্থাৎ তার বাপ-মা বৈষ্ণব ধর্মের হওয়ায় লোকটি জন্মগতভাবে তার জাতি দ্বারা বৈষ্ণব হয়েছে। তবে পরবর্তীতে কারো না কারো দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ভিন্ন ধর্ম, বর্ণ, গোত্র গ্রহণ করে। তবে এ ব্যাপারে বাবা-মা মূখ্য ভুমিকা পালন করে থাকে। তাই জাতি এখানে করণ কারক হবে।
৪. “উদ্যম বিহনে কার পুরে মনোরথ” – এ বাক্যে ‘উদ্যম’ কোন কারক?
ব্যাখ্যা ও সঠিক উত্তর: প্রশ্নটি রাবি ও খুবি ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম এসেছিল, যা পররর্তী কয়েকটি পরীক্ষায় আসতে দেখা যায়। উপরিউক্ত বাক্যের অর্থগত বোধ্যগমতা কারণে কারক নির্ণয় করা জটিল মনে হতে পারে। বাক্যস্থিত ‘উদ্যম’ পদের কারকটি নির্ণয় করতে হলে প্রথমে বাক্যের অর্থ জানতে হবে, তাহলে খুব সহজেই বুঝতে পারবেন; কোন কারক হয়।
‘উদ্যম’ অর্থ অধ্যবসায়; ‘বিহনে’ অর্থ বিনা বা ব্যতীত; পুরে অর্থ পূরণ হয়; মনোরথ (মনঃ+রথ) অর্থ ইচ্ছা বা বাসনা। তাহলে বাক্যের অর্থ দাঁড়ায়: “অধ্যবসায় ব্যতীত কারও ইচ্ছা বা বাসনা পূরণ হয়! তাই ‘উদ্যম’ (অধ্যবসায়) দ্বারা মনের ইচ্ছে পূরণ হয়। সুতরাং এই বাক্যে ‘উদ্যম’ হচ্ছে ইচ্ছে বা বাসনা পূরণের সহায়ক বা মাধ্যম অর্থাৎ করণ কারক।
লক্ষণীয়: ২০১৭ সালে ১৪তম বেসরকারি প্রবাষক নিবন্ধন পরীক্ষায় উপরিউক্ত প্রশ্নের ৪টি অপশনে ‘করণ কারক’ ছিল না; ছিল কর্তৃ/ অধিকরণ/ অপাদান/ কর্ম। সেক্ষেত্রে মনের ইচ্ছা পূরণের উৎস বোঝাতে ‘উদ্যম বিহনে’ অপাদান কারক হবে।
উদাহরণঃ-
১: তোমাতে করিব বাস। – কোন ধরনের অধিকরণ?
উত্তরঃ ভাবাধিকরণ। কারণ তোমাতে বলতে ‘তোমার ভাবনায়’।
২: তাকে ভূতে পেয়েছে। কোন কারক?
উত্তরঃ কর্তৃ কারক। অর্থ : ভূতে ধরেছে।
৩: রইলো পড়ে তোমার কাজ। – কোন কারক?
উত্তরঃ কর্তৃ কারক। পড়ে থাকার কাজটি ‘কাজ’-ই করছে।
৪: আমি কি ডরাই সখি ভিখারী রাঘবে?
উত্তরঃ অপাদান কারক। ভয়ের উৎস অপাদান।
৫: জীবনে মরণে তোমার সাথে থাকবো।
উত্তরঃ অধিকরণ কারক। জীবনকাল ও মৃত্যুর পরবর্তী কালের কথা বলা হয়েছে।
৬: এই পথটুকু অতিক্রম করে যাও।
উত্তরঃ কর্ম কারক। পথটিকে অতিক্রম করা বোঝাচ্ছে।
৭: আমি তোমার সঙ্গে বেঁধেছি আমার প্রাণ।
উত্তরঃ কর্ম কারক। প্রাণকে বেঁধেছি, তাই প্রাণ কর্ম।
৮: ষড়রিপু জয় করেছেন।
উত্তরঃ কর্ম কারকে শূন্য বিভক্তি। ষড়রিপুকে জয় করেছেন।
৯: বাংলায় কোন ক্ষেত্রে কর্ম কারকের বিভক্তি লোপ পায়?
উত্তরঃ জড় কর্মে ও বিধেয় কর্মে। বিধেয় কর্মে সব সময় লোপ পায়, জড় কর্মে অধিকাংশ সময় লোপ পায়।
১০: গন্ধে টেকা দায়।
উত্তরঃ করণ কারক। হেতুবাচক করণ। গন্ধের কারণে টেকা দায়।
১১: পিতৃদেবকে পত্র দিলাম।
উত্তরঃ কর্ম কারক। গৌণ-কর্ম। পত্র মুখ্য-কর্ম। জড়ধর্মী কর্ম-পদটি মুখ্য-কর্ম।
১২: পথ রুদ্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে।
উত্তরঃ কর্ম কারক। পথকে রুদ্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে।
১৩: সামঞ্জস্য বজায় রাখো।
উত্তরঃ কর্ম কারক।
১৪: চরণে আশ্রয় দিন। – কোন প্রকার অধিকরণ?
উত্তরঃ নৈকট্যসূচক। পায়ের কাছে আশ্রয় দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে।
১৫: সম্পদে আমার লোভ নেই।
উত্তরঃ অধিকরণ কারক। বিষয়াধিকরণ।
১৬: মৃত্যুর জন্য দিন গুনছি।
উত্তরঃ নিমিত্ত কারক।
১৭: মাটিতে মূর্তি গড়া হয়।
উত্তরঃ করণ কারক। উপাদানবাচক করণ।
১৮: ঘাস জন্মালো রাস্তায়।
উত্তরঃ কর্তৃ কারক। জন্মানোর কাজটি ঘাস করলো।
১৯: আদর্শে তিনি বামপন্থী।
উত্তরঃ করণ কারক।
২০: তাঁর হাতে অনেক ক্ষমতা আছে।
উত্তরঃ অধিকরণ কারক ।
২১: ছেলেটিকে সবাই ভয় পায়।
উত্তরঃ অপাদান কারক। ভয়ের উৎস অপাদান বলে গণ্য হয়।
২২: দর্শনী দিয়ে ঠাকুর দেখে এলাম।
উত্তরঃ কর্ম কারক। এখানে ‘দিয়ে’ পদটি অসমাপিকা ক্রিয়া, অনুসর্গ নয়, তাই করণ হবে না।
২৩: মৃত্যুতে জীবনের পরিসমাপ্তি হয়।
উত্তরঃ করণ কারক। মৃত্যুর দ্বারা ।
২৪: চলনে বলনে তিনি হলেন খাঁটি বাঙালি।
উত্তরঃ করণ কারক। লক্ষণাত্মক করণ।
২৫: তিনি চাকুরিতে ইস্তফা দিলেন।
উত্তরঃ অপাদান কারক। চাকুরি থেকে ইস্তফা দিলেন।
২৬: খাওয়াতে তোমার মন নেই।
উত্তরঃ অধিকরণ কারক। বিষয়াধিকরণ।
২৭: সমস্ত ঘটনাই কার্যকারণে বাঁধা আছে।
উত্তরঃ করণ কারক। উপায়াত্মক করণ।
২৮: দিনে-রাতে কোনো ফারাক নেই।
উত্তরঃ অধিকরণ কারক।
২৯: পোকায় কেটেছে।
উত্তরঃ কর্তৃ কারক।
৩০: তোমার চলে যাওয়া মেনে নিতে পারিনি। – কোন প্রকার কর্ম?
উত্তরঃ বাক্যাংশ কর্ম। কর্মটির মধ্যে সমাপিকা ক্রিয়া বা বিধেয় নেই। সে কারণে বাক্যাংশ।
৩১: সৌরভের দুর্দান্ত খেলা ভারতকে জিতিয়েছে। – কোন প্রকার কর্তা?
উত্তরঃ বাক্যাংশ কর্তা এবং একই সঙ্গে প্রযোজক কর্তা। ভারত জিতেছে, সৌরভের খেলা জিতিয়েছে।
৩২: ছুরি নিয়ে খেলবে না।
উত্তরঃ করণ কারক।
৩৩: পাশ করার জন্য পড়তে হবে।
উত্তরঃ নিমিত্ত কারক। এটিকে বাক্যাংশ নিমিত্ত বলা যায়। যদিও এমন ভাগ ব্যাকরণে আলোচিত হয়নি। তবু জেনে রাখা ভালো। জন্য অনুসর্গ ব্যবহৃত হয়েছে।
৩৪: কলমে কালি নেই।
উত্তরঃ অধিকরণ কারক। স্থানাধিকরণ।
৩৫: ঘাস জন্মালো রাস্তায়।
উত্তরঃ কর্তৃ কারক। জন্মানোর কাজটি ঘাসই করেছে।
৩৬: চারা থেকে বৃক্ষে পরিণত হয়েছে।
উত্তরঃ অপাদান কারক। রূপান্তরমূলক অপাদান।
৩৭: এক মুহূর্তে চেহারা বদলে ফেলল।
উত্তরঃ করণ কারক। কালাত্মক করণ। কাজ করতে যতটা সময় লাগে তা করণ হয়, অধিকরণ হয় না।
৩৮: মাথার উপর পাখা চলছে।
উত্তরঃ কর্তৃ কারক। জড় বস্তু হলেও পাখাই কর্তা, কারণ পাখাই চলছে।
৩৯: তিনি আকবরের শাসনকালে বর্তমান ছিলেন।
উত্তরঃ অধিকরণ কারক। কালাধিকরণ।
৪০: তোমার শয়তানি ঘরে রেখে এসো।
উত্তরঃ কর্ম কারক।
৪১: এ বছর চাষে কিছু পাইনি।
উত্তরঃ অপাদান কারক।
৪২: ধনী কর্তৃক গরিব শোষিত হয়।
উত্তরঃ কর্তৃ কারক। অনুক্ত কর্তা।
৪৩: “কণ্টক গাড়ি কমলসম পদতল মঞ্জির চীরহি ঝাঁপি…”
উত্তরঃ করণ কারক। চীর অর্থে কাপড়। কাপড় দিয়ে নূপুর ঢেকে (রাধিকা বর্ষাভিসারে যাওয়ার অনুশীন করছেন)।
৪৪: বাবাকে একটা চিঠি লিখেছি।
উত্তরঃ বাবাকে – গৌণ কর্ম, চিঠি – মুখ্য কর্ম।
৪৫: চঞ্চল চিএ পইঠো কাল।(চর্যাপদ)
উত্তরঃ অধিকরণ কারক। অর্থ: চঞ্চল চিত্তে কাল প্রবেশ করল।
৪৬: নগর পুড়িলে দেবালয় কি এড়ায়?
উত্তরঃ কর্তৃ কারক। এড়ানোর কাজটির কর্তা দেবালয়।
৪৭: শিশু কান্দে ওদনের তরে।(মুকুন্দরাম চক্রবর্তী)
উত্তরঃ নিমিত্ত কারক। ওদনের তরে অর্থ ভাতের জন্য।
৪৮: নূতনের ঢালাই করিতেছি পুরাতনের ছাঁচে।
উত্তরঃ করণ কারক। ছাঁচ এখানে ঢালাইয়ের উপকরণ।
৪৯: রূপে সে লক্ষ্মী।
উত্তরঃ করণ কারক। লক্ষণাত্মক করণ। রূপের দ্বারা বিচার করা হচ্ছে।
৫০: কবিতার ছত্রে ছত্রে করুণ রস সৃষ্টি হয়েছে।
উত্তরঃ অধিকরণ কারক। অধিকরণের বীপ্সা।
৫১: জনমানসে বিরূপ প্রভাব পড়বে।
উত্তরঃ অধিকরণ কারক।
৫২: ফলটি গাছের ডালে ঝুলছে।
উত্তরঃ অপাদান কারক। ক্রিয়াপদ ‘ঝুলছে’ না হয়ে ‘আছে’ হলে অধিকরণ কারক হতো। কারক সবসময় ক্রিয়ার উপর নির্ভর করে।
৫৩: তিলে তেল আছে।
উত্তরঃ অধিকরণ কারক।
৫৪: তিলে তেল হয়।
উত্তরঃ অপাদান কারক। আগের উদাহরণের সঙ্গে পার্থক্য লক্ষণীয়।
৫৫: শিক্ষকের কাছে আমরা শিক্ষা পাই।
উত্তরঃ অপাদান কারক। শিক্ষক এখানে শিক্ষার উৎস। কাছে- অনুসর্গ।
৫৬: সব কথা মুখে বলা যায় না।
উত্তরঃ করণ কারক। মুখের সাহায্যে বলা যায় না।
৫৭: কথাটা লোকের মুখে শুনেছি।
উত্তরঃ অপাদান কারক। মুখ থেকে শুনেছি। আগের উদাহরণের সঙ্গে পার্থক্য লক্ষণীয়।
৫৮: বাবা কাজে গেছেন।
উত্তরঃ নিমিত্ত কারক। কাজের উদ্দেশ্যে গেছেন।
৫৯: আমি আগামীকাল কাজে যোগ দেবো।
উত্তরঃ অধিকরণ কারক। উপরের উদাহরণের সঙ্গে পার্থক্য লক্ষণীয়। একটি যাওয়া, অন্যটি যুক্ত হওয়া বোঝাচ্ছে। যাওয়ার ক্ষেত্রে কাজ উদ্দেশ্য, যোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে আধার।
৬০: ঝগড়াতে সে বরাবর প্রথম।
উত্তরঃ অধিকরণ কারক। বিষয়াধিকরণ। ঝগড়া বিষয়ে প্রথম।
৬১: স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়াতে পরিবেশ নষ্ট হয়েছে।
উত্তরঃ করণ কারক। আগের উদাহরণের সঙ্গে পার্থক্য লক্ষণীয়।
৬২: লোকটি নেশায় ডুবে আছে।
উত্তরঃ অধিকরণ কারক। ভাবাধিকরণ।
৬৩: মদের নেশায় তার প্রাণটা কেড়ে নিল।
উত্তরঃ কর্তৃ কারক। নেশা এখানে প্রাণ নেওয়ার কাজ করছে। আগের উদাহরণের সঙ্গে পার্থক্য লক্ষণীয়।
৬৪: মদের নেশায় সে অসুস্থ হয়েছে।
উত্তরঃ করণ কারক। এখানে কর্তা সে, তার অসুস্থ হওয়ার কারণ নেশা। হেতুবাচক করণ।
৬৫: তার একমাত্র সুখ নেশাতে।
উত্তরঃ অধিকরণ কারক।
৬৬: ওকে কথায় ভোলানো যাবে না।
উত্তরঃ করণ কারক। কথার দ্বারা।
৬৭: তোমার কথায় ব্যঙ্গের সুর ছিলো।
উত্তরঃ অধিকরণ কারক। কথার মধ্যে ব্যঙ্গের সুর ছিলো।
৬৮: চরাচরে অন্ধকার নেমে এল।
উত্তরঃ অধিকরণ কারক।
৬৯: চরাচর অন্ধকারে ডুবে গেলো।
উত্তরঃ কর্তৃ কারক। উপরের উদাহরণের সঙ্গে ভাবের কোনও পার্থক্য না থাকলেও আলাদা কারক হয়েছে, কারণ ক্রিয়া দুটি আলাদা।
৭০: মা, আমাকে জল দাও।
উত্তরঃ সম্বোধন পদ। মনে হতে পারে জল দেওয়ার কাজটি মা করছে, কিন্তু এই বাক্যের কর্তা ‘তুমি’ ঊহ্য আছে। যে ব্যক্তি জল দেবে তাকে ‘মা’ বলে সম্বোধন করা হয়েছে।
৭১: তোমার চোখে জল পড়ছে।
উত্তরঃ অপাদান কারক। চোখ থেকে জল পড়ছে।
৭২: আমার চোখে ধুলো পড়েছে।
উত্তরঃ অধিকরণ কারক।
৭৩: সোনার সীতারে হরেছে রাবণ।
উত্তরঃ কর্ম কারক।
৭৪: মুঠি মুঠি ধানে গহনা তাহার পড়িয়াছে বুঝি ঝরে।
উত্তরঃ করণ কারক। ধানের দ্বারাই কবির কল্পনায় গহনার ছবি ফুটে উঠেছে। ধান এখানে গহনার প্রতিরূপ গঠনে সাহায্য করছে।
৭৫: ছেলেটি খেতে খুব ভালোবাসে।
উত্তরঃ কর্ম কারক। অসমাপিকা ক্রিয়া-রূপী কর্ম।
৭৬: চিকিৎসার জন্য শহরে এসেছি।
উত্তরঃ নিমিত্ত কারক। চিকিৎসা এখানে উদ্দেশ্য।
৭৭: ভুল চিকিৎসার জন্য মারা গেছে।
উত্তরঃ করণ কারক। ভুল চিকিৎসা এখানে মৃত্যুর কারণ।
৭৮: ইলিশের মরসুমে ঘরে বসে থাকলে কুবেরের চলবে না।
উত্তরঃ অধিকরণ কারক। কালাধিকরণ।
৭৯: এখন ইলিশের মরসুম চলছে।
উত্তরঃ কর্তৃ কারক। চলছে ক্রিয়ার কর্তা মরসুম। মরসুমটিই চলছে।
৮০: প্রতি বলে ছক্কা হাঁকাচ্ছে।
উত্তরঃ অধিকরণ কারক। বল ছক্কা হাঁকানোর আধার। এখানে বস্তুগত বল বোঝাচ্ছে না। ডেলিভারির ঘটনাটিকে ‘বল’ বলা হচ্ছে।
(হিন্দি : हर गेंद पर छक्का लगा रहा है। হিন্দিতে ‘পর’,’মে’ বিভক্তি অধিকরণে ব্যবহৃত হয়। করণ ও অপাদানে ‘সে’ বিভক্তি।)
৮১: দশ বলে পনেরো রান করতে হবে।
উত্তরঃ অপাদান কারক। দশ বল থেকে পনেরো করতে হবে।
৮২: ভয়ে প্রাণ শুকিয়ে গিয়েছিল।
উত্তরঃ করণ কারক। ভয় এখানে প্রাণ শুকিয়ে যাওয়ার কারণ। ভয়ের উৎসটি অপাদান হয়, ভয় যখন কারণ হিসেবে কাজ করে, তখন ভয় করণ হবে।
৮৩: কাপড়ে রঙ লেগেছে।
উত্তরঃ অধিকরণ কারক। স্থানাধিকরণ।
৮৪: খাবারগুলো কাপড়ে বাঁধো।
উত্তরঃ করণ কারক। কাপড় দিয়ে বাঁধা হবে।
৮৫: তাঁর কাপড়ে কোনো জাঁকজমক নেই।
উত্তরঃ অধিকরণ কারক।
৮৬: বইটা একরাতে পড়ে শেষ করলাম।
উত্তরঃ করণ কারক। কালাত্মক করণ। ক্রিয়া সম্পাদন করতে কত সময় লেগেছে তা বোঝানো হচ্ছে।
৮৭: বইটা কাল রাতে পড়লাম।
উত্তরঃ অধিকরণ কারক। কখন পড়লাম তা বোঝাচ্ছে।
৮৮: আমাগো দ্যাশে শান্তি নাই।
উত্তরঃ সম্বন্ধ পদ। বঙ্গালি উপভাষায় সম্বন্ধ পদে ‘গো’ বিভক্তি যুক্ত হয়।
৮৯: বাঘে-গোরুতে এক ঘাটে জল খায়। – কোন ধরনের কর্তা?
উত্তরঃ সহযোগী কর্তা। বাঘ ও গোরু সহযোগিতার ভিত্তিতে একই কাজ করে।
৯০: একটা ভাঙা কাপে চা খাচ্ছিলাম।
উত্তরঃ অপাদান কারক। কাপ থেকে চা খাচ্ছিলাম।
৯১: চা-টা কাপে ঢালো।
উত্তরঃ অধিকরণ কারক। ঢালা ক্রিয়ার আধার কাপ।
৯২: পাখির কূজনে পরিবেশ মুখরিত হল।
উত্তরঃ করণ কারক।
৯৩: পাখির কূজনে অপরূপ মিষ্টতা আছে।
উত্তরঃ অধিকরণ কারক। উপরের উদাহরণের সঙ্গে পার্থক্য লক্ষণীয়।
৯৪: দাদা, একটু সরে দাঁড়ান।
উত্তরঃ সম্বোধন পদ
৯৫: গগনে গরজে মেঘ, ঘন বরষা।
উত্তরঃ কর্তৃ কারক।
৯৬: তোমার সঙ্গে বেঁধেছি আমার প্রাণ সুরের বাঁধনে।
উত্তরঃ করণ কারক। সমধাতুজ করণ।
৯৭: তুমি দীর্ঘজীবী হও।
উত্তরঃ কর্তৃ কারক।
৯৮: তুমি এখন কী কথা ভাবছো?
উত্তরঃ কর্ম কারক।
৯৯: তুমি এখন কী ভাবছো?
উত্তরঃ কর্ম কারক। আগের উদাহরণের ‘কী’ পদটি ‘কথা’-র বিশেষণ রূপে ব্যবহৃত হয়েছে।
১০০: তোমার পরিচর্যায় সে সুস্থ হয়েছে।
উত্তরঃ করণ কারক। পরিচর্যা তাকে সুস্থ হতে সাহায্য করেছে।
১০১: একজন মনোবিদকে দেখিয়ে নাও।
উত্তরঃ কর্তৃ কারক। প্রযোজ্য কর্তা। প্রযোজক কর্তা ঊহ্য আছে।
১০২: সঙ্গে কিছু নাও।
উত্তরঃ কর্ম কারক।
১০৩: সঙ্গে কিছু নেই।
উত্তরঃ কর্তৃ কারক। উপরের উদাহরণের সঙ্গে পার্থক্য লক্ষণীয়।
১০৪: কাজটা যে-কেউ করতে পারে।
উত্তরঃ কর্তৃ কারক।
১০৫: আমরা ছুটি প্রার্থনা করছি।
উত্তরঃ কর্ম কারক।
১০৬: ছুটিতে দার্জিলিং বেড়াতে যাবো।
উত্তরঃ অধিকরণ কারক। কালাধিকরণ।
১০৭: ছুটির জন্য আবেদন করেছি।
উত্তরঃ নিমিত্ত কারকে ‘জন্য’ অনুসর্গ। বিভক্তি যাই থাক, অনুসর্গ থাকলে কারকে অনুসর্গটিই উল্লেখ করতে হয়। তাই ‘র’ বিভক্তি এখানে উল্লেখযোগ্য নয়।
১০৮: সব জামাকাপড় তোমার পছন্দে কেনা হবে।
উত্তরঃ করণ কারক। পছন্দ অনুযায়ী কেনা হবে। তোমার পছন্দ জামাকাপড় কিনতে সাহায্য করবে।
১০৯: আমার সৌভাগ্যে সে ঈর্ষান্বিত হয়।
উত্তরঃ করণ কারক। হেতুবাচক কারণ। সৌভাগ্য এখানে ঈর্ষা করার হেতু। এখানে কর্ম নেই। কাকে ঈর্ষা করে তা উল্লিখিত হয়নি। ঈর্ষান্বিত হওয়ার কারণটি উল্লেখ করা হয়েছে মাত্র।
১১০: আমার সৌভাগ্যকে সে ঈর্ষা করে।
উত্তরঃ কর্ম কারক। উপরের উদাহরণের সঙ্গে পার্থক্য লক্ষণীয়। এখানে সরাসরি সৌভাগ্যকেই ঈর্ষা করার কথা বলা হয়েছে। তাই সৌভাগ্য পদটি কর্ম-পদে পরিণত হয়ছে।
১১১: মনমাঝি তোর বৈঠা নে রে।
উত্তরঃ সম্বোধন পদ। কর্তা ‘তুই’ ঊহ্য আছে। এই বিষয়টি ভালো ভাবে মনে রাখতে হবে। সম্বোধন পদকে অনেক সময় কর্তা বলে ভ্রম হয়। ক্রিয়াপদটি দেখলেই বোঝা যাবে ‘মনমাঝি’ পদটি কর্তা হতে পারে না। কারণ ক্রিয়া-পদ ‘নে’। এই ক্রিয়াটি মধ্যম পুরুষের ক্রিয়া। ‘মনমাঝি’ প্রথম পুরুষ। সুতরাং মনমাঝি কর্তা হলে ক্রিয়াটিও প্রথম পুরুষের ক্রিয়া হতো।
১১২: চুরির ধনে কারও পেট ভরে না।
উত্তরঃ করণ কারক। ধন এখানে পেট ভরার উপায় রূপে কাজ করছে। যে পদটি ক্রিয়া-সম্পাদনের উপায় হয়, সেটির করণ-কারক হয়।
১১৩: টাকায় কী না হয়? কোন ধরনের করণ?
উত্তরঃ উপায়াত্মক করণ। টাকা বস্তু হলেও এখানে টাকার বস্তুমূল্যকে ব্যবহার করা হচ্ছে না, টাকার অন্তর্নিহিত ভাবমূল্য বা বিনিময়-মূল্যকে ব্যবহার করা হচ্ছে।
১১৪: আমরা ঘুরেছি দোরে দোরে।
উত্তরঃ অধিকরণে বীপ্সা। ‘দোর থেকে দোরে’ অর্থ বোঝায় না, ‘প্রতি দোরে’ অর্থ বোঝায়। তাই অপাদান হবার কোনো কারণ নেই। অপাদান করতে গেলে প্রথম দোরটি অপাদান ও দ্বিতীয় দোরটি অধিকরণ হবে, যা অসম্ভব, কারণ এটি একটি বীপ্সা। বীপ্সায় দুটি পদ আলাদা কারক হয় না।
১১৫: মাংস দিয়ে ভাত খেলাম।
উত্তরঃ করণ কারক। সহযোগে অর্থে করণ কারক হয়। ভাত এখানে প্রধান খাদ্য, মাংস তার সহকারী। এই কারণে মাংসকে খাওয়া হলেও মাংস কর্ম না হয়ে করণ-কারক হচ্ছে। পরবর্তী উদাহরণটি দেখলে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হবে আশা করছি।
১১৬: আজ দুপুরে মাংস-ভাত খেলাম।
উত্তরঃ কর্ম কারক। এখানে মাংস ও ভাত দুটিকেই খাওয়ার কথা সরাসরি বলা হচ্ছে । আগের উদাহরণে ভাতকে প্রাধান্য দিয়ে মাংসকে সহকারীর স্থান দেওয়া হয়েছে।